Occasion

গণেশ পূজা ২০২৫ Ganesh puja

download 10

ভগবান গণেশ হিন্দু ধর্মের অন্যতম জনপ্রিয় দেবতা। তিনি সিদ্ধিদাতা, বুদ্ধির অধিপতি ও বিঘ্ননাশক দেবতা হিসেবে সর্বত্র পূজিত হন। প্রতি বছর ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের চতুর্থী তিথিতে গণেশ চতুর্থী বা গণেশ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। ২০২৫ সালে এই পূজার দিনটি আরও বিশেষ কারণ এ বছর ভক্তদের মাঝে আধ্যাত্মিকতার সাথে সাথে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনকে নতুন মাত্রায় দেখা যাবে। শহর থেকে গ্রাম—সবখানেই পূজার আনন্দে ভরে উঠবে চারপাশ।

গণেশ পূজা মূলত মহারাষ্ট্রে সবচেয়ে বড়ো করে পালন করা হলেও এখন গোটা ভারতজুড়েই এটি একটি সামাজিক উৎসবে পরিণত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, বিহার সহ বহু রাজ্যে আজকাল গণেশ পূজার ব্যাপক আয়োজন করা হয়। বাংলাতেও দুর্গাপূজার আগে গণেশ পূজা একটি উৎসবমুখর আবহ তৈরি করে। বিশেষ করে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা, যুব সমাজ ও বিভিন্ন ক্লাব মিলিতভাবে প্যান্ডেল তৈরি করে, গণেশের প্রতিমা গড়ে এনে পূজা করে।

২০২৫ সালের পূজায় নানা নতুনত্ব লক্ষ্য করা যাবে। আধুনিক কারিগররা প্রতিমা তৈরিতে পরিবেশবান্ধব উপাদান ব্যবহার করছেন যাতে নদী বা জলাশয়ে প্রতিমা বিসর্জনের সময় প্রকৃতির কোনো ক্ষতি না হয়। মাটির তৈরি, প্রাকৃতিক রঙে রাঙানো প্রতিমাগুলো মানুষের দৃষ্টি কাড়বে। প্লাস্টার অফ প্যারিস বা কেমিক্যাল রঙের ব্যবহার ধীরে ধীরে কমছে, যা পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে ইতিবাচক উদ্যোগ।

গণেশ পূজার প্রধান তাৎপর্য হলো নতুন সূচনার জন্য আশীর্বাদ লাভ করা। ভগবান গণেশকে বলা হয় বিঘ্নহর্তা, অর্থাৎ তিনি জীবনের সব বাধা দূর করেন। তাই ব্যবসায়ী, ছাত্রছাত্রী, শিল্পী—সকলেই এই দিনে তাঁকে পূজা করেন সাফল্য ও সমৃদ্ধির আশায়। নতুন কাজ শুরুর আগে ভগবান গণেশের নাম জপ করার প্রথা বহু প্রাচীন। ২০২৫ সালের পূজায়ও মানুষ সেই প্রাচীন বিশ্বাসকে অটুট রেখেই আগামীর পথে আশীর্বাদ কামনা করবে।

এই পূজা শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, সামাজিক সংহতিরও এক অনন্য উদাহরণ। প্রত্যেক মহল্লায়, ক্লাবে বা গ্রুপে সবাই মিলে তহবিল সংগ্রহ করে পূজার আয়োজন করে। কেউ অর্থ দিয়ে সাহায্য করে, কেউ শ্রম দিয়ে, আবার কেউ বা আলপনা আঁকে বা সাজসজ্জায় হাত লাগায়। এতে সমাজে এক ধরনের ভ্রাতৃত্ববোধ ও সহযোগিতার মানসিকতা তৈরি হয়। বিশেষ করে কচিকাঁচাদের উৎসাহ চোখে পড়ার মতো। স্কুলছাত্রীরা গান গায়, নাচে অংশ নেয়, কবিতা আবৃত্তি করে।

গণেশ পূজা মানেই আনন্দমুখর শোভাযাত্রা। প্রতিমা আনার সময় ঢাক-ঢোল, বাঁশি, কীর্তনের সুরে চারদিক মুখরিত হয়ে ওঠে। মানুষ ভিড় জমায়, বাচ্চারা নতুন জামা পরে আনন্দ করে। শহরের রাস্তাঘাট আলোকসজ্জায় সাজানো হয়। কোথাও কোথাও প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়—সেরা প্রতিমা, সেরা প্যান্ডেল বা সেরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নির্বাচিত হয়। এভাবেই ধর্মীয় আবহের পাশাপাশি একটি সাংস্কৃতিক উৎসবে রূপ নেয় এই পূজা।

২০২৫ সালের পূজা আরও বিশেষ কারণ এবার সামাজিক মাধ্যম ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মেও এর প্রচার বহুগুণ বেড়ে যাবে। ইউটিউব, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে মানুষ পূজার ছবি, ভিডিও, লাইভ অনুষ্ঠান শেয়ার করবে। অনেকে আবার ভার্চুয়ালি পূজার অংশীদার হবে, বিশেষত যারা ভিনরাজ্যে বা বিদেশে বসবাস করেন। প্রযুক্তি মানুষকে পূজার আনন্দে আরও বেশি করে যুক্ত করে দিচ্ছে।

খাবারের ক্ষেত্রেও গণেশ পূজার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। ভগবান গণেশের প্রিয় মিষ্টি হলো ‘মোদক’। বাংলায় মোদকের পাশাপাশি লাড্ডু, সন্দেশ, রসগোল্লা ইত্যাদি নৈবেদ্য হিসেবে নিবেদন করা হয়। পূজার পর ভোগপ্রসাদ সবার মধ্যে বিতরণ করা হয়। ভক্তরা বিশ্বাস করেন, এই প্রসাদ গ্রহণ করলে জীবনে সৌভাগ্য আসে।

গণেশ পূজার অন্যতম আকর্ষণ বিসর্জন। কয়েকদিনের পূজা শেষে ভক্তরা আনন্দ-হর্ষে প্রতিমাকে শোভাযাত্রায় নিয়ে গিয়ে নদী বা পুকুরে বিসর্জন দেন। বিসর্জনের সময় মানুষ একে অপরকে আলিঙ্গন করে, ‘আগামী বছরে আবার আসবেন’ বলে আহ্বান জানায়। এই বিদায়ে যেমন অশ্রু থাকে, তেমনই থাকে নতুন আশার প্রতিশ্রুতি।

২০২৫ সালে পরিবেশের দিকে নজর রেখে বিসর্জনেরও আলাদা ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অনেক জায়গায় কৃত্রিম জলাশয় তৈরি করা হচ্ছে যাতে নদী দূষিত না হয়। মানুষ এখন পরিবেশ সচেতন হয়ে পড়েছে এবং ধর্মীয় আচার পালনের সাথে সাথে প্রকৃতি রক্ষার দায়িত্বও নিচ্ছে।

বাংলার প্রেক্ষাপটে গণেশ পূজা এক ধরনের সামাজিক উৎসবে রূপ নিয়েছে। যেমন অনেক ক্লাব দুর্গাপুজোর আগে গণেশ পূজা আয়োজন করে, যা মানুষকে একত্রিত হওয়ার সুযোগ দেয়। বিশেষ করে বাচ্চারা এই পূজায় বেশি উৎসাহী থাকে কারণ এটি তাদের সৃজনশীলতা প্রকাশের এক অনন্য মাধ্যম।

এছাড়া ২০২৫ সালের পূজায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষ কর্মসূচি দেখা যাবে। অনেক স্কুলে গণেশ পূজা উপলক্ষে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, আঁকাআঁকির অনুষ্ঠান বা প্রবন্ধ রচনা প্রতিযোগিতা হবে। ছাত্রছাত্রীরা দেবতার প্রতি ভক্তি প্রকাশের পাশাপাশি নিজেদের প্রতিভা দেখানোর সুযোগ পাবে।

গণেশ পূজা শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, এর পেছনে রয়েছে একটি দর্শন। ভগবান গণেশের বড়ো মাথা আমাদের শেখায় যে জ্ঞানার্জনই সর্বশ্রেষ্ঠ। তাঁর বড়ো কান ইঙ্গিত দেয়—আমাদের বেশি করে শোনা উচিত, ধৈর্য ধরে শেখা উচিত। ছোটো চোখ আমাদের মনোযোগী হতে শেখায়, আর বড়ো পেট সবকিছু সহিষ্ণুতার সাথে গ্রহণ করার বার্তা দেয়। এই প্রতীকী শিক্ষা আজও মানুষের জীবনে সমান প্রাসঙ্গিক।

২০২৫ সালের গণেশ পূজা তাই শুধুমাত্র এক দিনের উৎসব নয়, এটি হবে একতা, ভক্তি, জ্ঞান ও পরিবেশ সচেতনতার সমন্বয়। নগর থেকে গ্রাম, ছোটো থেকে বড়ো—সকলের হৃদয়ে নতুন আশার আলো জ্বালাবে এই পূজা। মানুষ বিশ্বাস করবে, গণেশের আশীর্বাদে জীবনের প্রতিটি বিঘ্ন দূর হবে এবং সাফল্যের নতুন পথ খুলে যাবে।

Add Comment

Click here to post a comment

About Author

admin

আমি প্রদীপ কুমার জানা, পেশায় একজন ব্লগার ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর। প্রতিদিন নতুন খবর, সিরিয়ালের আপডেট, এবং ট্রেন্ডিং বিষয় নিয়ে লিখি NewPost.in-এ। আমার লেখা পাঠকদের জন্য তথ্যবহুল ও আপডেটেড রাখতে সবসময় চেষ্টা করি।
আমার ফেসবুক: Serial With Pradip

Log In

Forgot password?

Forgot password?

Enter your account data and we will send you a link to reset your password.

Your password reset link appears to be invalid or expired.

Log in

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.