Occasion

biswakarma puja 2025 :: ২০২৫ সালের বিশ্বকর্মা পূজা

images 9

বিশ্বকর্মা পূজা ২০২৫
বিশ্বকর্মা দেবতা হিন্দু ধর্মের অন্যতম দেবশিল্পী ও স্থপতি। তাঁকে বলা হয় দেবশিল্পাচার্য। পুরাণ মতে, স্বয়ম্ভূ ব্রহ্মার আদেশে দেবলোকে সমস্ত প্রাসাদ, রথ, অস্ত্র, অলঙ্কার, মন্দির এবং মহাসেতু বিশ্বকর্মা দেবতার হাতেই নির্মিত হয়েছিল। তিনি শুধু দেবতার স্থপতিই নন, তিনিই মানুষের কারিগরি জ্ঞানের মূল উৎস। তাই তাঁকে কারিগরদের অধিষ্ঠাত্রী দেবতা হিসেবেও পূজা করা হয়।

প্রতি বছর ভাদ্র মাসের শেষ দিনে, অর্থাৎ ভাদ্র সংক্রান্তির দিন বিশ্বকর্মা পূজা পালিত হয়। ২০২৫ সালে এই পূজার দিন পড়েছে সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে। এদিন শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং এক অনন্য শ্রম-উৎসব ও শিল্পোৎসব হিসেবে দেশজুড়ে পালিত হবে।


বিশ্বকর্মা পূজার তাৎপর্য

বিশ্বকর্মা দেবতা মূলত সৃজনশীলতা, প্রযুক্তি ও শ্রমের প্রতীক। তাঁর আশীর্বাদে মানুষ নির্মাণশিল্প, যন্ত্রপাতি পরিচালনা, কারখানার কাজ, কারিগরি শিল্পকলা ও প্রযুক্তিগত জ্ঞানে উন্নত হয়। তাই লোহা-ইস্পাত কারখানা, মেশিন, অটোমোবাইল, কারিগরখানা থেকে শুরু করে ছোট ছোট গ্যারেজ—সবখানেই এই পূজা গুরুত্ব সহকারে পালিত হয়।

বাংলায় বিশ্বকর্মা পূজা মানেই ঘুড়ি উৎসব। এই দিনে আকাশ ভরে ওঠে নানা রঙের ঘুড়িতে। কলকাতা, হাওড়া, মেদিনীপুর, বর্ধমান সহ বাংলার নানা শহরে আকাশ রঙিন হয়ে ওঠে। এটি শুধু আনন্দ নয়, বরং সমাজে মিলনমেলার পরিবেশ তৈরি করে।


২০২৫ সালের পূজার বিশেষ বৈশিষ্ট্য

২০২৫ সালে বিশ্বকর্মা পূজায় আধুনিকতার ছোঁয়া আরও বেশি করে দেখা যাবে। একদিকে ঐতিহ্য রক্ষা, অন্যদিকে প্রযুক্তির অগ্রগতি—এই দুই মিলিয়েই পূজা পালিত হবে।

১. পরিবেশবান্ধব প্রতিমা
মাটির প্রতিমা, প্রাকৃতিক রঙ ও সাজসজ্জা ব্যবহার করে পরিবেশ দূষণ কমানোর দিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কারখানা ও শিল্পাঞ্চলে ব্যবহৃত প্রতিমাগুলোও এখন ধীরে ধীরে পরিবেশবান্ধব হয়ে উঠছে।

২. ডিজিটাল প্রচার
সামাজিক মাধ্যমে বিশ্বকর্মা পূজার ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়বে। অনেক প্রতিষ্ঠান অনলাইনে বিশেষ শুভেচ্ছা বার্তা প্রকাশ করবে। ভার্চুয়াল অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রবাসী বাঙালিরাও পূজার আনন্দ ভাগ করে নেবেন।

৩. সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
স্কুল, কলেজ, ক্লাব ও কারখানায় নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। কবিতা, গান, নাটক, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ইত্যাদির মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে উৎসবে যুক্ত করা হবে।

৪. কারিগরি কর্মশালা
কিছু জায়গায় বিশ্বকর্মা পূজা উপলক্ষে বিশেষ কারিগরি কর্মশালা, প্রদর্শনী বা সেমিনারের আয়োজন করা হবে যাতে ছাত্রছাত্রীরা আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারে।


পূজার রীতি ও আয়োজন

বিশ্বকর্মা পূজার মূল রীতি হলো প্রতিমা বা প্রতীকী রূপে দেবতার পূজা, এরপর যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি ধুয়ে-মুছে সাজানো হয়। গাড়ি, মেশিন, ল্যাথ, ড্রিল, ছেনি, হাতুড়ি, দা—সবকিছুকে দেবতার প্রতীক মনে করে পূজা করা হয়।

প্রথমে ভক্তরা দেবতার প্রতিমা স্থাপন করে, তারপর পুষ্পাঞ্জলি, অরতি ও নৈবেদ্য নিবেদন করা হয়। নৈবেদ্য হিসেবে মিষ্টি, ফল, নারকেল, মোয়া, নাড়ু ইত্যাদি দেওয়া হয়। অনেক জায়গায় পায়েস ও খিচুড়িও প্রসাদ হিসেবে রান্না করা হয়।

বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো ঘুড়ি ওড়ানো। সকালে থেকেই মানুষ ছাদে ভিড় জমায়, রঙিন ঘুড়ি আকাশে উড়তে থাকে। “ভোঁ কাট” এর শব্দে চারপাশ মুখরিত হয়ে ওঠে। এটি একধরনের আনন্দ-উৎসব, যা বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।



সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক

বিশ্বকর্মা পূজা শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কারণ এদিন বহু ব্যবসায়ী, কারখানা-মালিক বা কর্মচারী একসাথে মিলিত হয়। অফিস-কলকারখানায় ছুটি থাকে, ফলে সবাই আনন্দে শরিক হয়।

এছাড়া ঘুড়ি, প্রতিমা, সাজসজ্জা, প্রসাদ ইত্যাদির জন্য একটি বড় বাজার তৈরি হয়। কারিগর, শিল্পী, দোকানদার—সবাই এর থেকে উপকৃত হন। এই উৎসব অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সাহায্য করে।


বিশ্বকর্মা দেবতার প্রতীকী শিক্ষা

ভগবান বিশ্বকর্মার পূজা আমাদের শুধু আনন্দই দেয় না, বরং জীবনের গভীর শিক্ষা দেয়।

তিনি শেখান শ্রমই মহৎ।

যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করলে জীবন উন্নত হয়।

সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী শক্তিই মানুষের সবচেয়ে বড় সম্পদ।
তাই ২০২৫ সালের পূজায় এই বার্তা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে, কারণ আজকের যুগ প্রযুক্তি ও শ্রমের যুগ।



পরিবেশ সচেতনতা ও পূজা

আজকের দিনে পরিবেশ রক্ষা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তাই প্রতিমা বিসর্জন ও ঘুড়ি উৎসবের সময়ও পরিবেশ রক্ষার দিকে নজর দিতে হবে। নদী দূষণ রোধে কৃত্রিম ট্যাঙ্কে বিসর্জনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ঘুড়ির সুতোয় কাচ বা ধাতব মিশ্রণ ব্যবহার না করার প্রচার চলছে যাতে মানুষ ও পাখিদের ক্ষতি না হয়।



বাংলার সংস্কৃতিতে বিশ্বকর্মা পূজা

বিশ্বকর্মা পূজা বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। দুর্গাপূজার আগে এটি এক ধরণের আনন্দমেলা। বিশেষ করে কলকাতা ও হাওড়ায় এই পূজার ব্যাপক ধুমধাম দেখা যায়। ছাদে ছাদে ঘুড়ি ওড়ানো, প্যান্ডেল সাজানো, প্রতিমা পূজা—সব মিলে এক উৎসবের আবহ।

গ্রামে গ্রামে কারিগররা, মিস্ত্রিরা, কারখানার কর্মীরা এই পূজাকে তাদের পেশাগত জীবনের অপরিহার্য অংশ মনে করেন। ২০২৫ সালেও সেই ঐতিহ্য বহমান থাকবে।



বিশ্বকর্মা পূজা ২০২৫ তাই শুধু এক দিনের উৎসব নয়, এটি সৃজনশীলতা, শ্রম, প্রযুক্তি ও আনন্দের সমন্বয়। এ পূজা আমাদের শেখায়, মানুষের মেহনত ও জ্ঞানের মাধ্যমেই সমাজ এগিয়ে যায়। ভগবান বিশ্বকর্মার আশীর্বাদে কারিগর থেকে প্রকৌশলী—সবাই নতুন উদ্যমে কাজে মনোনিবেশ করেন।

এই পূজা যেমন ধর্মীয় তাৎপর্য বহন করে, তেমনই সামাজিক বন্ধনকে মজবুত করে। শ্রমের মর্যাদা, প্রযুক্তির উন্নতি, প্রকৃতির সুরক্ষা ও সাংস্কৃতিক মিলনের যে সমাহার এখানে দেখা যায়, তা বাঙালির উৎসব-সংস্কৃতিকে আরও সমৃদ্ধ করে।

২০২৫ সালের বিশ্বকর্মা পূজা তাই হবে এক অনন্য উদাহরণ—যেখানে ভক্তি, শ্রম, জ্ঞান ও আনন্দ একসাথে মিলেমিশে এক মহা-উৎসবে রূপ নেবে।

Add Comment

Click here to post a comment

About Author

admin

আমি প্রদীপ কুমার জানা, পেশায় একজন ব্লগার ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর। প্রতিদিন নতুন খবর, সিরিয়ালের আপডেট, এবং ট্রেন্ডিং বিষয় নিয়ে লিখি NewPost.in-এ। আমার লেখা পাঠকদের জন্য তথ্যবহুল ও আপডেটেড রাখতে সবসময় চেষ্টা করি।
আমার ফেসবুক: Serial With Pradip

Log In

Forgot password?

Forgot password?

Enter your account data and we will send you a link to reset your password.

Your password reset link appears to be invalid or expired.

Log in

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.