News ভাইরাল

ভাইরাল হবার ইচ্ছা Viral Website 🙂 NewPost

Picsart 25 08 09 00 21 53 899

কয়েক দিন ভাইরাল: একবিংশ শতাব্দীর ক্ষণস্থায়ী আলোড়নের প্রতিচ্ছবি

বর্তমান ডিজিটাল যুগে ‘ভাইরাল’ শব্দটি যেন আমাদের প্রতিদিনকার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফেসবুক, টিকটক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো আমাদের এমন এক বাস্তবতায় দাঁড় করিয়েছে, যেখানে যেকোনো সাধারণ ঘটনা কিংবা অদ্ভুত কনটেন্ট কয়েক ঘণ্টার মধ্যে লক্ষ লক্ষ মানুষের মাঝে পৌঁছে যেতে পারে। একটি ভিডিও বা ছবি মুহূর্তেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে—আর মানুষ একে বলে “ভাইরাল” হওয়া। তবে এই ভাইরাল হওয়া আসলেই কতটা গুরুত্বপূর্ণ, কতটা দীর্ঘস্থায়ী কিংবা সমাজে এর প্রকৃত প্রভাব কতটা গভীর—তা নিয়ে অনেকেই ভাবেন না। ভাইরাল হওয়ার এই প্রবণতা যেমন মানুষের আকস্মিক জনপ্রিয়তা এনে দেয়, তেমনি অনেক সময় এটি অসত্য, বিভ্রান্তিকর বা নেতিবাচক প্রভাবও ফেলে। Newpost.in-এ প্রায় প্রতিদিনই দেখা যায় কোনো না কোনো সাধারণ বা মজাদার ভিডিও, যেমন—একজন যুবক গাড়ির বোনেটে অ্যাকোয়ারিয়াম বসিয়ে চালাচ্ছেন—এগুলো ভাইরাল হওয়ার পর নেটিজেনরা নানা প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন, ট্রল করছেন বা বাহবা দিচ্ছেন। কিন্তু কয়েক দিন পর সেই আলোচনার কোনো অস্তিত্ব থাকে না।

এই ভাইরাল কনটেন্টের বৈশিষ্ট্যই হলো এর অস্থায়িত্ব। একটি কনটেন্ট যত আকর্ষণীয় বা ব্যতিক্রমধর্মী হোক না কেন, তা মানুষের মনোযোগে থাকতে পারে গড়ে ৪৮ ঘণ্টা থেকে এক সপ্তাহ পর্যন্ত। তারপরেই মানুষ নতুন কোনো কিছুর পেছনে ছুটে যায়। এ যেন এক মানসিক রোলার কোস্টার, যেখানে সবাই সাময়িক উত্তেজনার খোঁজে ছুটছে, কিন্তু কিছুই ধরে রাখছে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আমাদের মনোযোগের পরিধিকে এতটাই ক্ষুদ্র করে ফেলেছে যে, একটি ভিডিও দেখে হেসে ফেললেও, আমরা সেটি নিয়ে ভাবি না—তাকে মূল্যায়ন করি না। এর ফলে একটি ভাইরাল কনটেন্ট যত দ্রুত খ্যাতি অর্জন করে, তত দ্রুতই তা বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যায়। আমরা যত বেশি ভাইরাল কনটেন্ট খুঁজি, ততই আমাদের ধৈর্য কমে যায় এবং মনোযোগ ছুটে যায় নতুন উত্তেজনার দিকে।

এই প্রবণতার পেছনে মানুষের মনস্তত্ত্বও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মানুষ স্বাভাবিকভাবে নিত্যনতুন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পছন্দ করে। একজন অচেনা রিকশাচালকের গান, রাস্তার এক বাচ্চার নাচ, বা কোনো অদ্ভুত কর্মকাণ্ড মুহূর্তে আমাদের আগ্রহের কেন্দ্রে চলে আসে। আমরা সেটি শেয়ার করি, মন্তব্য করি, মেম বানাই, ট্রেন্ড করি—কিন্তু কয়েক দিন পর সেটি আমাদের ‘ফিড’ থেকে উধাও হয়ে যায়। এখানে একটি সাংস্কৃতিক দিকও আছে—আমরা মুল্যবান বা গভীর বিষয়ের চেয়ে ‘বিনোদনমূলক’ ও ‘অদ্ভুত’ কনটেন্টের প্রতি বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছি। আমাদের আগ্রহের তালিকায় এখন আর শিল্প, সাহিত্য, গবেষণা বা গঠনমূলক বিতর্ক নেই; বরং ট্রেন্ডিং, ভাইরাল ও হিউমারের আধিপত্য স্পষ্ট।

তবে ভাইরাল হওয়া সব সময় খারাপ কিছু নয়। অনেক সময় এটি ইতিবাচক পরিবর্তনেরও সূচনা করে। যেমন, কোনো সামাজিক সমস্যা, দুর্নীতি বা অবিচারের ভিডিও ভাইরাল হলে প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়, জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হয়। কখনো কখনো ভাইরাল কনটেন্টের মাধ্যমে কেউ নিজ প্রতিভা প্রদর্শনের সুযোগ পায়—যেমন রাস্তার এক গায়কের গান ভাইরাল হয়ে পরে সে মঞ্চে পারফর্ম করার সুযোগ পায়। আবার কিছু মানুষ ভাইরাল কনটেন্টকে পুঁজি করে ইনকাম করছে, ব্র্যান্ডিং করছে, চাকরি পাচ্ছে বা উদ্যোক্তা হয়ে উঠছে। এখানে প্ল্যাটফর্মের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ—Newpost.in এর মতো ওয়েবসাইটগুলো ভাইরাল কনটেন্টকে পপুলারাইজ করায় অনেকেই নিজের কাজ বা চিন্তাকে বিশাল দর্শকের সামনে উপস্থাপন করার সুযোগ পাচ্ছেন।

কিন্তু সমস্যা শুরু হয় যখন ভাইরাল হওয়ার পেছনে মানুষ নিজের চারিত্রিক মূল্যবোধ বিসর্জন দেয়। শুধুমাত্র ফেম পাওয়ার জন্য অনেকেই আজকাল কৃত্রিম কনটেন্ট বানায়, অপ্রাসঙ্গিক কাজ করে, কখনো কখনো গুজব ছড়ায় বা মানুষকে বিভ্রান্ত করে। Newpost.in-এ মাঝে মাঝে এমন কিছু ভাইরাল ভিডিও দেখা যায় যেগুলো মিথ্যা বা সাজানো, অথচ মানুষ তা যাচাই না করেই বিশ্বাস করে ও শেয়ার করে। এর ফলে সামাজিক বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়, কখনো কখনো বিশৃঙ্খলা ছড়ায়। এইভাবে ভাইরাল হওয়া যেন একধরনের ‘ডিজিটাল জুয়া’তে পরিণত হয়েছে—যেখানে কেউ কেউ রাতারাতি জনপ্রিয় হয়, আবার কেউ কৃত্রিম আলোচনার মধ্যে ডুবে গিয়ে নিজের বাস্তব জীবন ও ভবিষ্যৎকে ধ্বংস করে ফেলে।

এছাড়া ভাইরাল হওয়ার চাপ তরুণ প্রজন্মের ওপর মানসিক চাপ তৈরি করছে। “ভাইরাল না হলে আমি কিছুই না”—এই মনোভাব তাদের মধ্যে আত্মমর্যাদা ও আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দিচ্ছে। অনেকেই রিল, ভিডিও বা পোস্ট বানানোর পেছনে এতটাই সময় দিচ্ছে যে পড়াশোনা, পেশাগত জীবন ও পারিবারিক সম্পর্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। আবার অনেক সময় যারা ভাইরাল হয় তারা সমালোচনার শিকার হয়—ট্রোলিং, কটূক্তি বা ব্যক্তিগত আক্রমণ তাদের মানসিকভাবে বিধ্বস্ত করে। কেউ কেউ এই মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে চরম সিদ্ধান্ত পর্যন্ত নিয়ে ফেলে। তাই ভাইরাল হওয়া কেবল বাহ্যিক উজ্জ্বলতার বিষয় নয়, এর গভীরে অনেক জটিলতা, দায়িত্ব ও ঝুঁকি জড়িত।

সবশেষে, “কয়েক দিন ভাইরাল” হওয়া মানে হলো একটি ক্ষণস্থায়ী আলোকচ্ছটা—যা হঠাৎ জ্বলে উঠে, কিছু সময় আলো ছড়ায়, এবং তারপর নিভে যায়। এটি যেন আধুনিক সমাজের একটি রূপক, যেখানে সব কিছু দ্রুত আসে, দ্রুত যায়, এবং আমরা একটি অনবরত খোঁজে থাকা দৃষ্টির বন্দী। আমাদের উচিত এখন এই ‘ভাইরাল’ সংস্কৃতির ভালো-মন্দ বিশ্লেষণ করে নিজেদের অবস্থান নির্ধারণ করা। আমরা কি কেবল বিনোদনের জন্য ভাইরাল কনটেন্ট খুঁজব? নাকি আমরা এমন কনটেন্ট তৈরি করব ও সমর্থন করব, যেগুলো সমাজ, সংস্কৃতি ও ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে? Newpost.in-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলো এই প্রশ্নগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে আছে—তারা কীভাবে ভাইরাল কনটেন্টকে ফিল্টার করবে, কীভাবে গঠনমূলক ভাইরাল কনটেন্টকে বেশি গুরুত্ব দেবে, সেটিই হবে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ।

Add Comment

Click here to post a comment

About Author

admin

আমি প্রদীপ কুমার জানা, পেশায় একজন ব্লগার ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর। প্রতিদিন নতুন খবর, সিরিয়ালের আপডেট, এবং ট্রেন্ডিং বিষয় নিয়ে লিখি NewPost.in-এ। আমার লেখা পাঠকদের জন্য তথ্যবহুল ও আপডেটেড রাখতে সবসময় চেষ্টা করি।
আমার ফেসবুক: Serial With Pradip

Log In

Forgot password?

Forgot password?

Enter your account data and we will send you a link to reset your password.

Your password reset link appears to be invalid or expired.

Log in

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.